মুক্তগদ্য- বাঁচুন তো!

বাঁচুন তো!
-শম্পা সাহা

 

 

জীবনে আমরা সব সময় ভালো হতে চাই সবার কাছে। আমার এক পরিচিতা দিদি আছেন, যিনি শিক্ষিকা শুধু নন এক সফল শিক্ষিকা এবং সফল মা ও ঘরণীও বটে। যার সব সময় ভাবনা, কি ভাবে পারফেক্ট হওয়া যায়! ঘর সব সময় একদম গুছানো, সিলেবাস স্কুলে সব্বার আগে শেষ, শুধু কাজের ক্ষেত্রই নয় পারিবারিক ক্ষেত্রেও তিনি একেবারেই পারফেক্ট। সব সময় কি একটা ওনাকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়! সব সময় টেনশনে থাকেন, খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন, যাতে সব কাজ সময়ে, শুধু সময়ে নয় যেন সময়ের আগেই করা যায়।
এর ফলে, সবাই ওনার থেকে সার্ভিসটা নিয়েছেন কিন্তু তার জন্য বাড়তি কিছু ওনার ভাগ্যে জোটেনি। বরং যাদের জন্য উনি এত টেনশন করতে করতে উচ্চ রক্তচাপের শিকার, তারাই বলেন, “তোমার সবটাতেই এত বাড়াবাড়ি কেন?” এতে করে উনি কখনো শান্তি পাননি! সর্বক্ষণ পারফেক্ট হতে গিয়ে, কখন যেন সবাইকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে, নিজেকেই গুরুত্ব দিতে ভুলে গেছেন।
আমরা সবার কাছে ভালো হতে গিয়ে নিজের কাছে ভালো হতে ভুলে যাই, নারীপুরুষ নির্বিশেষে! সবার জন্য করতে গিয়ে নিজের জন্য করতে ভুলে যাই। সবার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এটাও ভুলে যাই যে আমি নিজেও একজন মানুষ। আমার নিজের প্রতিও দায়িত্ব আছে! নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব, আমিই না নিই, কার দায় পড়েছে আমাকে ভালো রাখবার? কী দরকার এত পারফেক্ট হয়ে? এত ভালো হয়ে বাড়তি কি পাবো? এখুনি বলে বসবেন না যে, অপরের জন্য করাতেও আনন্দ! যদি তাই হতো তাহলে, একসময় তিনি টেনশনে ভুগতেন না। আনন্দ আর টেনশন নিশ্চয়ই এক নয়!
একটু থামুন, দাঁড়ান, লোকের কাছে ভালো হবার লোভ ছাড়ুন। জানবেন দিনের শেষে আমরা ঈশ্বরেরও সমালোচনা করি, “ঈশ্বর কেমন তোমার বিচার? আমাকে এত কষ্ট কেন দিয়েছো?” তাহলে আপনি তো কোন ছাড়। তাই বাঁচার আনন্দে বাঁচুন, সবার জন্য বাঁচুন সঙ্গে সঙ্গে নিজের জন্যেও।

Loading

Leave A Comment